বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৬ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বিশ্ব নবীর আগমনে, সুরভিত পরিবেশে পুলকিত বিশ্ব আজীবন সম্মাননা পেলেন জনাব ওসমান গণি ও শফিকুর রহমান মধু মিয়া বৃষ্টির ধারায় মুছে যাক “রোজা রাখি, আল্লাহর হুকুম পালন করি, নিজে সুস্থ থাকি অপরকে সুস্থ থাকতে উৎসাহিত করি” মঙ্গলকাটা কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার ‘MCTC’র এক যুগ পূর্তিতে আনন্দ ভ্রমণ ফেনিবিল ও কোনাপাড়া সমাজকল্যাণ যুব সংঘের অমর একুশে উদযাপন ‘আব্দুল গণি ফাউন্ডেশন’ মেধাবৃত্তি পরিক্ষা-২২ এর বৃত্তি প্রাপ্তদের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত নারায়ণতলা মিশন উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত সুনামগঞ্জের ডলুরা বর্ডারহাটে অনিয়ম ও মাদক বন্ধের দাবীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত তৃতীয় বারের মত অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো দাখিল ২০০৪ ব্যাচ এর মিলনমেলা

পৃথিবীর মাটির উপরে আমরা, তাহলে মাটির নিচে কি আছে?

পৃথিবীর মাটির উপরে আমরা, তাহলে মাটির নিচে কি আছে?

মো. আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুম ::

পবিত্র কুরআনের একটি আয়াত দিয়ে শুরু করা যাক “আমি নভোমন্ডল,ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয়দিনে সৃষ্টি করেছি এবং আমাকে কোনরূপ ক্লান্তি স্পর্শ করেনি” (সূরা ক্বাফঃ ৩৮)।

পৃথিবী সূর্য থেকে দূরত্ব অনুযায়ী তৃতীয়, সর্বাপেক্ষা অধিক ঘনত্বযুক্ত এবং সৌরজগতের আটটি গ্রহের মধ্যে পঞ্চম বৃহত্তম গ্রহ। সূর্য হতে এটির দূরত্ব প্রায় ১৫ কোটি কি.মি।এটি সৌরজগতের চারটি কঠিন গ্রহের অন্যতম। পৃথিবীর অপর নাম “বিশ্ব” বা “নীলগ্রহ”। ইংরেজি ভাষায় পরিচিত আর্থ (Earth) নামে, গ্রিক ভাষায় পরিচিত গাইয়া নামে, লাতিন ভাষায় এই গ্রহের নাম “টেরা (Terra)।

বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞান আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। এখন আমারা অনেক কম কষ্টেই অনেক কাজ করে ফেলতে সক্ষম হচ্ছি। মাহাকাশও এখন মানুষের খুব কাছে। আর এটাও বিজ্ঞানের দান। বলতে গেলে আমরা এখন অনেকটাই বিজ্ঞান নির্ভর হয়ে গেছি। কিন্তু আসলেই কি বিজ্ঞান সব সমস্যার সমাধান জানে? এত কিছুর পরেও অনেক কিছুর সমাধানই বিজ্ঞান আমাদের দিতে পারেনি। আমাদের পৃথিবীর এমন কিছু রহস্য আছে যা বিজ্ঞান ভেদ করতে পারেনি। তার মধ্যে অন্যতম বারমুডা ট্রাঙ্গেল এবং পৃথিবীর মাটির নিচে কী আছে এগুলো অন্যতম। মাটির উপরে আমরা বীরদর্পে চলি কিন্তু মাটির নিচে কি রয়েছে তা নিয়ে কী একবারও চিন্তা করেছি? মানুষের ক্ষমতা খুবই সীমিত, যা কোভিড-১৯ প্রমাণ করে দিয়েছে। আজ আমরা পৃথিবীর মাটির নিচে কি আছে এ বিষয় নিয়ে কথা বলব। আমাদের পৃথিবীর মাটির নিচের একদম গভীরে কি আছে তা কারও পক্ষে জানা সম্ভব হয়নি এখনও। ভূপৃষ্ঠ এবং এর নিচের অল্প কিছু গভীরতা পর্যন্ত কি আছে আমরা শুধু সেটুকুই জানি। আমাদের অনেকের ধারণা যে পৃথিবীর গভীরে পেট্রল, কয়লা, সোনা ইত্যাদির মত খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়। হ্যাঁ! সত্যিই। তবে এগুলো শুধু কিছুটা গভীরে গেলে পাওয়া যায়। কিন্তু তারও নিচে অর্থাৎ পৃথিবীর কেন্দ্রে ও কেন্দ্র সংলগ্ন অঞ্চলে কি আছে তা এখনও জানা যায়নি।

বিজ্ঞানীরা এই বিষয়টি জানার জন্য একটি ১২ কিলোমিটার লম্বা গর্ত খোঁড়েন এবং এটিই পৃথিবীর সব থেকে দীর্ঘতম গর্ত। এর থেকে গভীর গর্ত মানুষের পক্ষে করা সম্ভব হয়নি। এই গর্তটির নাম কোলা সুপার ডিপ বোরহল। এটি রাশিয়াতে অবস্থিত। এই গর্তটি বানাতে প্রায় ছাব্বিশ বছর সময় লেগেছিল। এখন অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে ১২ কিলোমিটার গর্ত করার পরে এমন কি হলো যে আর গর্ত করল না বিজ্ঞানীরা? কেন তারা থেমে গেলেন?

আসলে বিজ্ঞানীরা থেমে যায়নি, তারা এই প্রোজেক্ট বন্ধ করতে বাধ্য হয়। বারো কিলোমিটার গর্ত করার পরে নিচের উষ্ণতা প্রচণ্ড বেড়ে যায়। আমরা সবাই জানি যে, পৃথিবীর যত গভীরে যাওয়া যায় এর উষ্ণতা তত বাড়তে থাকে। ১২ কিলোমিটার খোঁড়ার পরে নিচের উষ্ণতা এতোটাই বেড়ে যায় যে, এর পরেও যদি মাটি খোঁড়া হয় তবে মাটি খোঁড়ার সব যন্ত্র গলে যাবে এবং সেই জন্যই এই প্রোজেক্টটিকে বন্ধ করে দেয়া হয়। এই গর্তটিকে ডিপেস্ট আরটিফেসিয়াল পয়েন্ট অন আর্থ বলা হয়। অর্থাৎ এর নিচে কি আছে তা কারও পক্ষে জানা সম্ভব নয়। এর মাধ্যমে একটি বিষয় পরিষ্কার তা’হলো মানুষের ক্ষমতা খুবই সামন্য বরং সমস্ত ক্ষমতা সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা’আলার। তিনি পৃথিবী নিয়ে কোরআনের মধ্যে বিস্ময়কর তথ্য দিয়েছেন। পবিত্র কোরআন সত্যিই একগুচ্ছ বিস্ময়ের সমষ্টি। অক্ষর থেকে শব্দ, শব্দ থেকে বাক্য অজানা সব জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্মুক্ত বিশ্বকোষ। তেমনি যে গ্রহে বসবাস করি, অর্থাৎ পৃথিবী এ সম্পর্কেও কোরআনে রয়েছে বৃহৎ তথ্যভাণ্ডার। মহান আল্লাহ বলেন, বিশ্বাসীদের জন্য পৃথিবীতে অসংখ্য নিদর্শনাবলি রয়েছে। (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ২৩)
তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিস্ময়কর তথ্য এখানে উল্লেখ করা হলো— মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে পৃথিবীর সূচনা।

খুব বেশি দিনের কথা নয় যে মানুষ জানতে পেরেছে মহাবিশ্বের সূচনা এক মহাবিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে ঘটেছে। আইনস্টাইনের ক্ষেত্র সমীকরণ থেকে ফ্রিদমান সমীকরণ। তার পর বিশ্বতত্ত্ব নীতি এবং হোবল নীতি। সর্বশেষ ১৯৬০ সালে মহাজাগতিক অণুতরঙ্গের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বিজ্ঞান যখন ক্লান্ত, তখন দেখা গেল আজ থেকে প্রায় এক হাজার ৫০০ বছর আগেই বিশ্বস্রষ্টা তাঁর মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে এ ব্যাপারে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। ‘অবিশ্বাসীরা কি দেখে না যে সপ্তাকাশ ও পৃথিবী পুঞ্জীভূত হয়ে ছিল। অতঃপর আমি উভয়টি এক মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে সূচনা করেছি।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৩০)

পৃথিবীর সৃষ্টি মহাকাশ সৃষ্টির আগে

মহাকাশ নাকি পৃথিবী? আকাশের গ্রহ-নক্ষত্র, নাকি পৃথিবীর গাছপালা, কোনটি আগে সৃষ্টি হয়েছে? উত্তর খুঁজতে বেশি দূর যেতে হবে না। আমাদের ঘরের পবিত্র কোরআন খণ্ডটি হাতে নিলেই যথেষ্ট। তাতে চোখ বুলালেই দেখতে পাব, ‘আপনি বলুন, সত্যিই কি তোমরা সেই মহাপ্রভুকে অস্বীকার করছ! যিনি পৃথিবীকে মাত্র দুদিনে সৃষ্টি করেছেন এবং তার অংশীদার নির্ধারণ করছ? তিনি তো সমস্ত জগতের প্রতিপালক। যিনি পৃথিবীতে তার উপরাংশে পাহাড় স্থাপন করেছেন এবং জমিনের ভিতরাংশ বরকতপূর্ণ করেছেন আর ভূগর্ভে সুষমরূপে খাদ্যদ্রব্য মজুদ করেছেন মাত্র চার দিনে। সব যাচনাকারীর জন্য সমানভাবে। অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করলেন আর তা ছিল ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। (সুরা : ফুসসিলাত, আয়াত : ৯-১১) এখানে পর্যায়ক্রমে প্রথমে পৃথিবী সৃষ্টি এরপর ভূগর্ভস্থ বিষয়াবলির আলোচনার পর আসমানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

পৃথিবী দ্রুতগতিতে ছুটছে!

পবিত্র কোরআনে পৃথিবী স্থির কিংবা সূর্যের পাশে ঘূর্ণমান কোনোটিই বলা হয়নি। বরং এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে যা এসেছে তার মূল কথা হলো, পৃথিবী আপন কক্ষপথে দ্রুতগতিতে সাঁতার কাটার মতো ঢেউ খেলে ছুটে চলেছে। বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীর চলন প্রকৃতি প্রধানত দুই ধরনের। প্রথমত, পৃথিবীর নিজস্ব ঘূর্ণায়ন যা ঘণ্টায় প্রায় এক হাজার ৬০০ কিলোমিটার। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মহান আল্লাহ যিনি আসমান জমিন যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং দিনকে রাতের ওপর এবং রাতকে দিনের ওপর আচ্ছাদিত করেন। (সূরাঃ জুমার আয়াতঃ৫)।

আর এ কথা শিরোধার্য, কোনো বৃত্ত আকৃতির জিনিসকে অনুরূপ অন্য কোনো জিনিস দ্বারা বারবার আচ্ছাদিত করার জন্য, তা ঘূর্ণমান হওয়ার বিকল্প নেই। দ্বিতীয়ত, সূর্যকে ঘিরে পৃথিবীর সন্তরণ। বহুকাল যাবৎ মানুষ এ ধারণা পোষণ করে আসছে যে পৃথিবী সূর্যের পাশে ঘূর্ণমান। তবে খুব সাম্প্রতিক সময়ে মহাকাশ গবেষকরা নিশ্চিত করেছেন যে সূর্যকে ঘিরে পৃথিবীর চলার ধরনটাকে ঘূর্ণন শব্দে ব্যাখ্যা করা যথাযথ নয়। বরং পৃথিবীসহ আরো অনেক গ্রহ উপগ্রহ সর্বদা সূর্যকে ঘিরে সাঁতার কাটার মতো ওপর-নিচ ঢেউ তুলে সম্মুখপানে অগ্রসর হচ্ছে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে চন্দ্র, সূর্য ও পৃথিবীর আলোচনা টেনে বলেন, প্রত্যেকেই আপন কক্ষপথে সন্তরণ করছে। (সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৪০)
পৃথিবীর নিচে বিপুল পানির উৎস

টিউবওয়েল চেপে পানি তুলছেন কিংবা পাম্পের সাহায্যে। কিন্তু কখনো কি ভেবেছেন ভূগর্ভের এই বিপুল পরিমাণ পানির উৎস কোথায়? তাহলে জেনে নিন, মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি আসমান থেকে পরিমাণমতো পানি বর্ষণ করি, অতঃপর তা ভূগর্ভে সংরক্ষণ করে রাখি।’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ১৮)

সত্যিই আমাদের পৃথিবী বিস্ময়কর! আমাদের জ্ঞান আমাদেরকে যেন সঠিক পথে চলার তৌফিক দেয়।সর্বশক্তিমান স্রষ্ঠার কাছে এটাই হোক আমাদের কামনা।

লেখক : মো. আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুম: কলামিস্ট, শিক্ষাগুরু, প্রাবন্ধিক, আইনজীবী, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সমাজকর্মী ও বহু গ্রন্থ প্রণেতা।


আপনার এ্যাড দিন

ফটো গ্যালালি

Islamic Vedio

বিজ্ঞাপন ভিডিও এ্যাড




© All rights reserved © 2018 angina24.com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com